বাংলা
ওয়েব সিরিজের আজ ‘হ্যাপি বার্থ ডে’। টিনএজ পর্বের রগরগে চুমু, আর প্রতীকী যৌন দৃশ্য
ছেড়ে অবশেষে সাবালক হয়েছে সে। এই প্রথম বার ‘ফুল ন্যুডিটি’কে মধ্যবিত্তের টাচফোনে ওয়েব
সিরিজের পর্দায় নিয়ে এসেছেন পরিচালক অরুণাভ খাসনবিশ। যৌনতা নিয়ে সামাজিক ট্যাবু, ‘লোগ
কেয়া কহেঙ্গের’ মুখে সপাটে কষিয়েছেন চড়। ‘সিন’ — আড্ডাটাইমসের এই নতুন সিরিজটি শুক্রবার
মুক্তি পেতেই আলোড়ন তুলে দিয়েছে সিনে মহলে।
ছবির
প্রয়োজনে যৌনতা? নাকি যৌনতার জন্য ছবি? টিআরপি বাড়ানোর সস্তা নেশা? নাকি ‘আর্ট ফর
আর্টস সেক’? ভুরু কুঁচকে গিয়েছে একটা মহলের। “যত বাড়াবাড়ি”! বলে নাক সিটকে হাঁটা দিয়েছেন
তাঁরা। আবার ঠিক বিপরীত মেরুতে বসে থাকা হাতে গোনা কয়েক জন অবাক হয়ে তাকিয়ে বলেছেন,
“মির্জাপুর, সেক্রেড গেমসে শয্যা দৃশ্য দেখে বাহবা দেওয়া মানুষগুলো নিজের ভাষাতে নগ্ন
দৃশ্যে এত আপত্তি কেন? কেন এই ছুঁৎমার্গ?”
সিরিজের
অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্র শ্বেতা মিশ্র, কোনওদিনও চাননি ছয়টা পর্বের ওই সিরিজের থেকে
মাত্র কয়েকটি সঙ্গমের বা চুমুর দৃশ্য দেখে লোকে তাঁকে চিনুক, মনে রাখুক। বহরমপুরে বড়
হয়ে উঠেছেন তিনি । স্কটিশে বটানি অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। অভিনয় ভাল লাগত। সিরিয়াল
করেছেন। এই ওয়েব সিরিজের অফারটা আসতেই চলে গিয়েছেন কাস্টিং টিমের সঙ্গে কথা বলতে। তারাও
লুকোছাপা করেননি। প্রথম দিনই খোলাখুলি জানিয়ে দিয়েছিলেন, “এই এই দৃশ্য আছে সিরিজে”।
শোনা
মাত্র বুকের ভিতরটা কি হাল্কা কেঁপেছিল শ্বেতার? মধ্যবিত্ত ‘ মূল্যবোধ’ মাথা চারা দিয়ে
চিৎকার করে বলে উঠেছিল, “না! ছি ছি। লজ্জা করে না? লোকে কী বলবে? ” সে সব কিছুই হয়নি।
শান্ত হয়ে টিমকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “ডাস দিস ফিল্ম রিকোয়ার ইট?” স্ক্রিপটা শুনেছিলেন।
ছিটকে গিয়েছিলেন। এত রোমাঞ্চ, এত সাসপেন্স। ‘হ্যাঁ’ বলে দিয়েছিলেন অল্প ভেবেই। হ্যাঁ
তো বলে দিলেন, কিন্তু বাড়ির লোকদেরও তো জানাতে হবে।
বাড়ির
লোক বলতে মা এবং বোন। বাবা মারা গিয়েছেন প্রায় দু’ বছর হতে চলল। মা’কে ফোন করলেন। কথোপকথন
খানিকটা এ রকম।
“মা,
একটা নতুন প্রোজেক্ট” নিয়েছি।
“খুব
ভাল, তা আমায় বলছিস যে? কিছু হয়েছে?”
“প্রোজেক্টটা
খুব ভাল। কিন্তু কিছু ইন্টিমেট সিন রয়েছে।”
আর
কথা বাড়াননি মা, মেয়ের উপর ভরসা ছিল অগাধ। আর এই ভরসার জোরেই বোধহয় এই চ্যালেঞ্জটা
নিতে পারার সাহস দেখিয়েছিলেন।
একটি
ডার্ক থ্রিলার, যে খানে পুরো গল্পটাই এক যুগলের অদ্ভুত কিছু ফ্যান্টাসির উপর ভর করে
আবর্তিত হচ্ছে সে খানে, সেক্স সিন আসবে এটাই কি স্বাভাবিক নয়, প্রশ্ন রাখেন শ্বেতা?
‘জাজড’
হওয়ার ভয় তাড়া করবে না? তাড়া করবে না ‘বোল্ড’ তকমা পেয়ে যাওয়ার বিড়ম্বনা? টাইপকাস্টিংয়ের
থেকে অনেক আগেই মুখ ফিরিয়েছে টলিউড। ‘লোগ ক্যায়া কহেঙ্গে’ নিয়েও মাথা ঘামাতে চান না
তিনি। অনেক কষ্ট করে অভিনয়টা করেছেন। ক’টা অন্তরঙ্গ দৃশ্যের জন্য একটা গোটা মানুষের
সৃজনশীলতা। কৃষ্টি, পরিশ্রমকে দাঁড়াতে হবে আদালতে! এতটাও পল্কা তো নন তিনি।
বিশেষ
সেই সব দৃশ্যে অভিনয় করার সময় কাঁপছিলেন তিনি। পরিচালক থেকে সহ অভিনেতা, সবটাই খুব
সহজেই সহজ করে নিয়েছিলেন। ঠিক যেমন সহজ করে দেখেছিলেন শ্বেতার মা। মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে
ছিলেন ঢাল হয়ে।
হায়
সমাজ! যতই ট্যাবু ভাঙার বুলি আওড়াই না কেন প্রশ্ন যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ে না। এই কয়েক
বছর আগের কথা । ‘গান্ডু’ , ‘কসমিক সেক্স’-ছবিতে নগ্ন দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন ঋ। ‘কসমিক
ছবি’ টি বেশ প্রশংসিতও হয়েছিল। সেরা অভিনেত্রীর তকমাও জুটেছিল ঋ-র জীবনে। কিন্তু তা
স্বত্বেও এখনও প্রতি মুহূর্তে মিসজাজড হতে হয় তাঁকে, বলছিলেন তিনিই। ঋ
বলছিলেন, “দিস গার্ল হ্যাস টু পেয়ে আ প্রাইজ ফর দ্যাট। কেন? নিজেকে দিয়ে বুঝেছি। এমন
একটা সময় ছিল কোনও কাজ পাইনি। এখনও তাঁর মুল্য দিয়েই যাচ্ছি। ঋ মানেই তো গান্ডু, কসমিক
সেক্স, এমনটাই বলতো লোকে। যৌনতাকে স্বাভাবিক ভাবে নেওয়ার মতো মানসিকতা এখনও পর্যন্ত
আমাদের দেশে হয়নি। আর কোনওদিনও হবেও না। আমাকে প্রচুর স্যাক্রিফাইজ করতে হয়েছে। শ্বেতাকে
‘কুদোস’। তবে আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি সেক্স বিক্রি হয়। আগেও হয়েছে। উওম্যান অ্যান্ড হার
বডি ইজ পার্ট অফ দিস।”
বাংলা
ওয়েব সিরিজের দুনিয়ায় চর্চিত ওয়েব সিরিজ 'চরিত্রহীন'-এ অভিনয় করেছিলেন নয়না
গঙ্গোপাধ্যায়। শ্বেতার কাজকে সাধুবাজ জানিয়েছেন তিনি। "আমরা শিল্পী।
কাজ নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট কেন করব না বলুন তো? আমি শুনেছি চরিত্রহীনে আমার চরিত্রটি অনেককেই
অফার করা হয়েছিল। তাঁরা না করে দিয়েছিলেন। না করেছিলেন বলেই কাজটা আমার কাছে এসেছিল।
আর সেই সিরিজটি কেমন হিট করেছিল তা তো সকলেই জানেন", বলছেন নয়না।
সেক্স
যে বিক্রি হয়, সে কথা অস্বীকার করেননি পরিচালক অরুণাভও। তবে? শুধুই বিক্রির জন্য? অরুণাভ
বলছিলেন, “যখন ওয়েব সিরিজটার কথা ভাবি তখন গল্পের স্বার্থে আমার ন্যুড সিনের প্রয়োজন
ছিল। কিন্তু তা কখনওই যাতে ভালগার না হয়ে যায় সে দিকটাও মাথায় রাখতে হত। এই যে সারা
বিশ্বে বিভিন্ন ছবিতে প্রয়োজনে নগ্নতাকে ব্যবহার করা হয়েছে, তার বেশ কিছু অত্যন্ত
এস্থেটিকালি ব্যবহৃত হয়েছে। আমার সিরিজেও প্রয়োজনেই এসেছে ন্যুডিটি।সস্তা টিআরপি-র
জন্য নয়।”
সমালোচনা,
পাল্টা যুক্তি, কড়া জবাব, বাংলা ছবির সাবালকত্ব নিয়ে প্রশ্ন জারি থাকবেই। কিন্তু এরই
মধ্যে বহরমপুরের মেয়েটির আরও ভাল অভিনয় করার তাগিদ নিঃশব্দে বেড়েই চলেছে। ‘সিন’-এ
নিজের সবটুকু দিয়ে কাজ করেছেন তিনি। পেয়ে গিয়েছেন ভাল কাজ করার খিদে। থামবেন না তিনি।
এগিয়ে যাবেন। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকবে, “কুছ তো লোগ কহেঙ্গে...লোগো কা কাম হ্যায়
কহেনা...”।