আমতা থেকে পাকা রাস্তাটা সোজা চলে গিয়েছে রামচন্দ্রপুরের দিকে।এই রাস্তারই বামদিকে ঢালমাথা।স্থানীয় এলাকায় বেশ পরিচিত নাম।ঢালমাথার চিত্রটা আর পাঁচটা দিনের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।চারিদিক জুড়ে কেবল নিস্তব্ধতা।সপ্তাহ ঘুরে গেলেও দেখা নেই খদ্দেরদের। যার ফলে অন্ন সংস্থান করাটাই কার্যত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে গ্রামীণ হাওড়ার শতাধিক যৌনকর্মীর।
গ্রামীণ হাওড়ায় মূলত দু’টি যৌনপল্লী রয়েছে।প্রতিদিন দুপুরের পর থেকেই বহু মানুষ ভিড় জমাতে শুরু করেন আমতা ও উলুবেড়িয়ার এই দুই যৌনপল্লীতে।দিনের শেষে যৎসামান্য রোজগারে কোনওরকমে হাঁড়ি চড়ে যৌনপল্লীর প্রতিটি ঘরে।করোনা আর লকডাউনের দ্বৈত থাবায় একধাক্কায় আজ সেই ছবিটা উধাও। দু’ই যৌনপল্লী মিলিয়ে রয়েছেন প্রায় শতাধিক যৌনকর্মী।
এই পেশার উপরই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েকশো পরিবার নির্ভরশীল।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উলুবেড়িয়ার এক যৌনকর্মী জানালেন,”গতবার নোট বাতিলের জেরে ব্যবসায় আংশিক ক্ষতি হয়েছিল। তবে এবার পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত।”এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ প্রায় ১২-১৫ দিন খদ্দেরদের দেখা না মেলায় আর্থিক অনটনের সম্মুখীন হয়ে কোনওরকমে অর্ধাহারে দিন কাটছে এই সমস্ত যৌনকর্মীদের।
করোনা মোকাবিলায় করমর্দন করতেও বারণ করা হচ্ছে। যৌনপেশায় সংস্পর্শ এড়ানো সম্ভব নয়। তাই আতঙ্কে যৌনপল্লীমুখো হওয়া ছেড়েছেন খদ্দেররা। এর পাশাপাশি,লকডাউনের ফলে মানুষ সচারাচর বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন না। অর্থনৈতিক সমস্যা তো রয়েইছে। যার ফলে একদমই ফাঁকা যৌনপল্লীগুলো।অন্ন সংস্থানের পাশাপাশি রয়েছে বাড়িভাড়া, বিদ্যুতের বিল,সন্তানের খরচ। এত কীভাবে জোগাবেন তা ভেবেই কপালে চিন্তার ভাঁজ বছর তেত্রিশের যৌনকর্মী রূপার।
রূপার কথায়, ‘করোনা আমাদের সংসারে একেবারে বজ্রপাত ফেলে দিল।কীভাবে সন্তানকে নিয়ে দিন কাটবে তা ভেবে পাচ্ছিনা। আবার বছর পঁয়তাল্লিশের প্রতিমা জানাচ্ছেন,’করোনা আমাদের ভাত কেরে নিল।’ রুকসানা,রূপালী,মোহরদের জীবনের জলসাঘরটা বড়ই বৈচিত্র্যময়। জীবনজুড়ে লড়াই আর লড়াই।
এই যুদ্ধক্ষেত্রে ওরা হারতে শেখেনি। প্রত্যেক মুহুর্তে পরিস্থিতির বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে সগর্বে ওরা লড়ে চলেছে।তাই ওদের দৃঢ় বিশ্বাস—করোনা যুদ্ধে ওরা জয়ী হবেই হবে; লকডাউন শেষ হয়ে আবার খদ্দেররা ভিড় জমাবেন পল্লীতে।আবার আলো জ্বলে উঠবে ওদের ছোট্ট এক চিলতে সংসারে।