ছয়
বছর ধরে দুরারোগ্য ব্লাড
ক্যান্সারের ভুগছিল ছেলে অভিজিৎ মন্ডল
l ছেলেকে বাঁচানোর জন্য বাড়িটুকু পর্যন্ত
বেঁচে দিয়েছেন বাবা দুখিরাম মন্ডল । সম্পূর্ণ নিঃস্ব বনে গিয়েও শেষপর্যন্ত
বাঁচাতে পারেননি নিজের ছোট ছেলেকে l মৃত্যু
তাকে কেড়ে নিল বাবা-মায়ের
কাছে থেকে । যদিও তাতেও দুখিরামের
দুঃখ ঘুচলো না ।
ছেলের
মৃতদেহ কীভাবে করবেন সৎকার, হাতে যে কিছুই
নেই । কিছু সাহায্য পাওয়ার
আশায় নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জ থানার থানাপাড়া এলাকার বৃদ্ধ দুখিরাম মন্ডল ছুটেছিলেন বিডিও অফিস এবং পঞ্চায়েত
অফিসে । কিন্তু শনিবার দুটি অফিসই ছিল
বন্ধ । সাহায্য তারা পাননি শেষপর্যন্ত
l কীভাবে, কার সঙ্গে তারা
দেখা করবেন, বুঝে উঠতে পারেননি ।
তাই
শেষ পর্যন্ত ছেলের মৃতদেহ সৎকারের জন্য খরচ যোগাড়
করার উদ্দেশ্যে ভেবেছিলেন কৃষ্ণগঞ্জ হাই স্কুলের সামনে
রাস্তার পাশে ছেলের মৃতদেহ
রেখে ভিক্ষা করবেন । কিন্তু উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা থাকার কারণে তাও করে উঠতে
পারেননি তারা । কান্নায় দুচোখ ভেসে যাচ্ছিল বৃদ্ধ
দুঃখীরাম মন্ডল এবং তার স্ত্রী
পারুল মন্ডলের । ঠিক সেই সময়
ভগবানের মতোই তাদের কাছে
এসে দাঁড়ালেন কৃষ্ণগঞ্জ থানার ওসি রাজ শেখর
পাল । তিনি তুলে দিলেন
দুখিরাম মন্ডলের ছোট ছেলে অভিজিৎ
মন্ডলের মৃতদেহ সৎকারের খরচ । হাতে যেন চাঁদ
পেলেন তারা l ভাবতেই পারেননি, এমন পুলিশও আছে ।
ছেলের
মৃতদেহ নিয়ে সৎকার করতে যান তারা
l যদিও যাওয়ার আগে ছেলের পারলৌকিক
ক্রিয়ার খরচ জোগাড় করার
চিন্তা যখন চেপে বসছিল
মাথায়, তখনই রাজশেখর পাল
তাদের জানিয়ে দেন, সেই খরচও
তিনি যোগাবেন l বৃদ্ধ হলেও দুখিরাম মন্ডলের
দুহাত মাথায় ঠেকিয়ে যেন প্রণাম সারলেন । কাকে প্রণাম করলেন, তিনিই জানেন ।
তবে
সেই প্রণাম যে ভগবানের উদ্দেশ্যে,
তা তো বলাই বাহুল্য । হয়তো দিন এদিন তিনি
জীবন্ত রূপ দর্শন করলেন
ভগবানের । চারিদিকে যখন করোনা ভাইরাসের
আতঙ্ক চেপে বসেছে সমাজ
থেকে প্রশাসনে। তারই মধ্যে এমন
সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড করে সকলের প্রশংসা
আদায় করে নিলেন তিনি।
এমন পুলিশ অফিসারই তো চাই আমরা
জানালেন গ্রামবাসীরাও।